Saturday, February 24, 2018

এত দিন কোথায় ছিলে

কোথায় ছিলে এতদিন
কাজী মোহাম্মদ শিহাবুদ্দীন


যে দিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম তখন দিনটা ছিল খুব ঠান্ডা আর কুয়াশাচ্ছন্ন। সকালে মা হঠাৎ চেঁচিয়ে বলল, কিরে কতক্ষণ ধরে ডাকছি এখনো ঘুম ভাঙ্গছে না কেন?বন্ধ পেলে এই ভাবে ঘুমাতে হয়! এখন বাজে কটা?
ঘড়ির কাটায় তখন ৮ টা বিশ কি তেইশ বাজে
আমি একটু আলস নিয়ে বললাম মা! কি শুরু করলা? একটু ঘুমায়তে ও দিবা না? আজি তো ঘুমাচ্ছি।
মা রাগিয়ে বলে প্রতিদিন যে তোর জন্য এত তাড়াতাড়ি উঠি! এত কিছু করি, কই একদিন ও তো দেরী করলাম না!!
আচ্ছা মা তুমি না হয় নাস্তা করে নাও, আমি ঘুমায়,
কি বলেছিস! তুই, আজ না উঠলে আমি কিছুই খেতে পারব না।।
উফফফ কেন বিরক্ত করছো মা! আচ্ছা, দাড়াও উঠছি।
হাত মুখ ধুয়ে গেলাম মায়ের কাছে নাস্তা করার জন্য।
বলি মা নাস্তা দাও।
মা তখন হাসিয়ে বলেন,বাবা আজ ভাবছি তুই ঘরে আছিস, তাই আমি রুটি বানাবো না। তুই একটু কষ্ট করে দোকান থেকে নিয়ে আয় না।
রাগটা তখন চরম।
তারপরও মা তো রাগা কি আর যায়?
আচ্ছা দেন বলে মন খারাপ করে দোকানের দিকে ছুটলাম। আর ভাবলাম মা আজ পুরো সকালটা শেষ করে দিলো।কি সুন্দর ঘুম হচ্ছিলো, কিন্তু কে বা জানত সে দিন আমার সবচেয়ে সেরা দিনটা হবে
খুব বিরক্তি নিয়ে রাস্তায় হাটছি হঠাৎ আমার সামনে দিয়ে একটা মেয়ে কুয়াশার সাথে একা একা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হাটছে।যেই দেখা সেই ভাল লাগা হয়ে গেল। এর পর থেকে বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন সে আসবে।কিছু দিন যাওয়ার পর একদিন সেই এসে বলল এই যে শুনছেন?
হ্যা বলেন?
আমি না রাস্তায় ব্যাগ হারিয়ে ফেলেছি,নাকি ঘরে রেখে এসেছি বুঝছিনা, আপনি যদি একটু হেল্প করেন মানে আমার রিক্সা ভাড়া দেন, আমি আপনারে কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে এনে দিব।
ও হ্যা অবশ্যই।
এই বলে গাড়ি ভাড়া দিলেম।সে আমার নাম্বারটা চেয়ে নিল।
বললো আপনার নাম্বারটা দেন।  আমি টাকাটা এনে আপনাকে ফোন দিচ্ছি।
আমিও দিয়ে দিলাম।
প্রায় আধঘণ্টা পর সে টাকা ফেরত দিয়ে গেল। আমাকে আর ফোন দিল না। যেহেতু আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম।
এরপর প্রায় হাই হ্যালো চলতে থাকে দেখা হলে। তবে আমি আর আগের মত তার রাস্তায় দাড়ায় না, কারণ একটা লজ্জা এসে গেছে। ও পরিচিত হয়ে গেল তাই।
কিন্ত কিছু যাওয়ার পর ভার্সিটির চাপ ও বেড়ে গেল,খুব ভোরে চলে যাওয়া আর রাতে দেরী করে আসাতে ওর সাথে প্রায় এক মাস দেখা হয় না।
হঠাৎ অচিন নাম্বার থেকে একটা ফোন আসে
হ্যালো
হাই, আপনি তো?
হ্যা আমি তবে কে আপনি? কাকে চান?
আপনাকেই চাচ্ছি আর আমি আমিই!
পরিচয় দেন?
পরিচয় না দিলে কি কথা বলবেন না?
না!
আমি পরিচয় দিলে ও তো আপনি চিনবেন না!
দিয়ে তো দেখেনন!
আমি মেঘলা আর আপনি?
ওমা আপনি আমাকে চেনেন না?
চিনি, দেখেছি তবে, নাম জানি না আর আপনিও আমাকে চেনতে পারছেন না?  কি আর করব রাখি তাইলে!"
আরে না, চেনার মত আর কোন পরিচয় থাকলে দেন?আর আমার নাম্বার ফেলেন কোথা হতে?
নাম্বার আপনি নিজেই দিয়েছেন!
আমি! কেমনে কি!
হ্যা আপনি। আচ্ছা চেনার মত একটা পরিচিতি আছে!
কি বলেন দেখি?চেনা যায় কিনা?
ওই যে আপনার কাছ হতে টাকা নিয়েছিলাম ধার।ওই মেয়েটা।
ও আচ্ছা চিনেছি, কি অবস্থা? কি মনে করে ফোন দিলা?
ভাল আছি আর আপনি? কোন প্রব্লেম এ নাই তো!
না, কেন?
এইতো কদিন ধরে দেখছি না তাই।
ও আচ্ছা আসলে একটু ব্যাস্ত আছি তাই।
আচ্ছা সময় হলে একদিন দেখা করবেন?
হ্যা নিশ্চয়।
তারপর দেখা করলাম, ঘুরাফিরা করলাম,ফেরার সময় সে বলে।
আচ্ছা আপনাকে কি তুই বলা যাবে?
মানে কি?  কেন?
আপনাকে খুব ভাললাগে তাই।
এই ভাল লাগা প্রেম পর্যায়ে চলে আসে আসে।
এই ভাবে চলতে থাকে আমাদের সব।কিন্তু হঠাৎ একদিন তার ফোনে কল দিলাম, তবে কল যায় না। আমি ভাবলাম সাধারণ কিছু হবে হয়ত তবে এই কল প্রায় এক সাপ্তাহ যাবৎ বন্ধ থাকে। খুব চিন্তাই পড়ে গেলাম। তারপর একদিন কোথাও গেলাম না তাএ অপেক্ষায় থাকি আগের জায়গায়। তবে সে ওখানে ও এলো না। তাই সোজা হাটা দিলাম তার ঘরের দিকে। খোজ নিয়ে জানতে পারলাম তারা ৪ দিন আগে বাসা ছেড়ে চলে যায়।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে আর পাওয়া গেলনা।কারণ তার সাথে যোগাযোগ এর মাধ্যম ছিল মোবাইল। তা আজ অফ.
অনেক বার ফোন আর ম্যাসেজ দিয়েছি, তবে কোন উত্তর আসে নাই তাই প্রতি দিন তার কোননা কিছুর অপেক্ষায় ছিলাম তবে পাই নি কিছু, এইভাবে কেটে যায় দিনের পর দিন,তারপর  বছরের পর বছর।
এইগুলো তো পাঁচ বছর আগের কথা।
আজ আবার মা এসে বলে, ওরে আমার বাবাটা! তোর লেখাপড়া হতে সব কিছু গেল আমার হাতের উপর।জানিস আমি এখন বুড়ি হয়ে যাচ্ছি,হাতের কাজ আর উঠে না! আর তুই এখন চাকুরী করছিস ভালো। তবে আমাকে একটু মুক্তি দিবি?
:বুঝি নাই মা, কি বলছো?
:আমি না,আর তোকে রান্না করে খাওয়াতে পারব না,আমি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
:ও, সরি মা, এখন থেকে দোকান  থেকে প্রতিদিন খাওয়ার নিয়ে আসব, ওকে?
:না,আমি দোকানের খাবার খাই না বাবা।
:তাহলে একটা কাজ করো, কাজের বুয়াকে বলব রান্না করে দিতে।
:উফফফ বুঝিস না কেন? আমি নিজেই রান্না করতে অক্ষম নয়।সব রান্না তো আমিই করব।
:তাহলে?
:আরে আমার একটা সঙ্গি দরকার।
:সঙ্গি! আপনার পুরাতন বান্ধবী কারো নাম্বার থাকলে দিও, এদের সাথে যোগাযোগ করব। একদিন বেড়াতে আসতে বলব।
:আরে বোকা তা না।আমার ছেলের বউ আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গি হবে। সেই মিষ্টি মামুনিকেই আমি চাই।
:মা,প্লিজ! এখন এইসব কথা বাদ দাও না!
:না বাবা অনেক হয়েছে।আর না গত দুই বছর ধরে তোকে রিকুয়েস্ট করেই যাচ্ছি, আর না। আমি নিজেই নিয়ে আসব, নাকি পছন্দ আছে?
থাকলে বল আমি প্রস্তাব পাঠায়।
:মা প্লিজ আমার কিছুই নাই।
:তুই কি আমার দুঃখ বুঝবি না বাবা ? আমি ক দিন আর বাঁচব বল?
:আচ্ছা মা, তোমার ইচ্ছে যা হয়, কর।
:ওকে বাবা
তার পরের দিন মা আমাকে উনার পছন্দ একটা মেয়ে দেখে আসতে বলল।আমি মাকে বললাম আমার দেখা লাগবে না উনার পছন্দ আমার পছন্দ।
তারপর আমাকে জোরপূর্বক নিয়ে  যাওয়া হয়।আমি গেলাম। সবাই বসে আছে, খুব হাসাহাসি করছে তবে আমি ভাবতে লাগলাম জীবনে যাকে ভালবাসিলাম তারে তো পেলাম না।কেন যে সে এলো আমার জীবনে, না আসলে কি হত!
আচ্ছা যাক পাত্রী এল আমি নিচের দিকে থাকিয়ে আছি। মা কানে কানে বলল বাবা পাত্রী তোর পছন্দ হয়েছে? আমি হ্যা সূচক উত্তর দিলাম যদিও বা আমি মেয়েটিকে একটি বার ও দেখি নাই। মা বলেন, আমারো পছন্দ হয়েছে, ধর আংটি পড়িয়ে দেয়।হাতে আংটি ধরিয়ে দিল।আমি কার্ন্নাথ চোখে আংটি পড়িয়ে দিতে গেলাম,আর ওর হাত ধরলাম তারপর..
আমি চমকে উঠি,কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি থ হয়ে যায়।কারণ যে মেয়েটি ঘুমটা তোলেছে, আর যাকে আমি আংটি পড়াচ্ছি সে আর কেউ নয় সে আমার.
স্বপ্ন ও ভাবি নি তোকে আজ পাব!
মা কই পেলা ওকে?
:আরে বোকা আমি তো মা, বুঝিতো আমার বাবুটা কি চাই।
দেখ আমি প্রায় দেখতাম তুই ওর জন্য মন খারাপ করে আছিস। তবে একদিন ওর বাবার চিঠি পেয়ে আমি ওদের ঘরে এসেছিলাম কারণ ওখানে লিখা ছিল,"মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম, মেয়ে রাজি হচ্ছে না,সে বলেছে প্রান যাবে তবে এই ছেলেকে ছাড়া অন্য কারো সাথে বিয়ের আসরে বসবে না।"
তাই আমি ভাবলাম যে মেয়ে আমার ছেলের জন্য নিজের প্রাণ দিতে চাই,তাকেই আমার ঘরের বউ য়ে মানায়। ঘরের লক্ষি ঘরে মানায় অন্য জায়গায় না।আর মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হল আমার ছেলের পছন্দ খুব ভাল, ঠিক আমার মনের মত। তাই নিয়ে আনার প্রস্তুতি নিলাম।এতোদিন চেয়েছিলাম তুই কিছু বলবি সেই  আশায়,  কই তুই একবার ও তো বলিস নাই!!!
:মা ওকে অনেক খুজছিলাম তবে পায় নাই.
তাই তোমাকে কি করে বলব বুঝতে পারছিলামনা।
এই কোথায় ছিলি তুই!!অনেক খোঁজেছি তোকে.
কেমনে পারলি আমায় ছেড়ে যেতে.
কেমনে পারলি আমায় ছেড়ে থাকতে

ভালোলাগায় দূরহ

ভালোলাগায় দূরহ
কাজী মোহাম্মদ শিহাবুদ্দীন (ম্যাজিশিয়ান কাজী) 

স্কুলে পড়ন্ত চোধুরী বাড়ীর চোধুরী সাহেবের একমাত্র কন্যা নওশীন চোধুরী। লেখাপড়ায় খুব মেধাবী ছিল বলে সবাই তাকে খুব ভালোবাসত। তার সহপাঠী বন্ধুরাও ছিল তার ভাইয়ের মত। সে ছিল খুব শান্ত মেজাজের অধিকারী আর ভীতু প্রকৃতির। তার পরিবার নামে বড় থাকলেও তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল শঙ্কটাপন্ন। তাদের ঘরে কোনো মতে দুই বেলা আহার জুটত। কিন্তু লেখাপড়ার জন্য যখন নওশীনের খুব চাপ পরে তখন সে খুব পরিশ্রম করার সত্তেও রেজাল্ট বের হত মন্দ। তাই শেষ পর্যন্ত তার কোচিং-এ ভর্তি অনিবার্য হল। অভাবের মধ্যে আবার মেজবান দেওয়ার মত তার বাবাকে কোচিং এর টাকাটা দিতে হয়। সারাদিন স্কুলের পর বিকেলের সময়টা ছিল কোচিং এর। কোচিং ছুটি হতে হতে প্রায় অন্ধকার নেমে আসত। এইভাবে সন্ধায় চলাচল তার জন্য খুব দুঃসহ হয়ে পরে। তবুও সে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। কিন্তু তাকে যখন পরতে হচ্ছে বিভিন্ন বাধায় তখন সে আত্নহারা হয়ে পরে কারন রাস্তায় যাতায়াতের সময় তাকে নিয়ে কটুক্তি করছে গ্রামের কিছু বখাটে ছেলেরা। এমনকি তারা তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে তাতে রাজি নাহওয়াতে তারা তার সাথে নানান খারাপ ব্যাবহার করে এবং বলে তার সাথে অন্যকোন ছেলেকে দেখলে নাকি তারা তাকে হত্যা করবে। কিন্তু সে এসব সহ্য করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। সে শুধু ভাবত, “আমার পিতার আশা আমাকে ডাক্তার বানানো তাই আমি আমার পিতার সেই আশা পূরন করব”। তার পিতাও তাকে কথা দিয়েছিল তাকে ডাক্তার বানাবে এবং তাকে দিয়ে গ্রামের সেবা করাবে। কিন্তু একদিন নওশীনের কোচিং এর মাস্টার একটু বিশ্রাম নেওয়ায় কোচিং ক্লাশ দেরিতে শুরু হয়। তাই নওশীন চেয়েছিল ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসতে কারন অন্ধকারে বাড়ি যেতে তার ভয় করে। কিন্তু স্যার
যেতে দেননী এবং বললেন, “আজ গুরুত্ত্বপূর্ণ কয়েকটা বিষয় নিয়ে আলচনা হবে”। তাই নওশীন সন্ধ্যার আগে বাড়ী যেতে পারেনি। স্যার যখন ছুটি দেন তখন প্রায় অন্ধকার নেমে আসল। নওশীনকে চিন্তিত দেখে তার খুব অন্তরঙ্গ  বন্ধু নিশাত প্রস্তাব রাখল, “আজ তোকে আমি বাড়ীতে পৌঁছে দেব, কোনো চিন্তা করতে হবেনা তোর”। কিন্তু নওশীন নারাজ কারন সে জানে তার সাথে কোনো ছেলেকে দেখলে বখাটেরা আক্রমন করবে। তবু নিশাত বলে, “আজ আমি যাবই যাব, আমাকে কেউ বাধা দিতে পারবেনা”। নওশীন যখন তার এই পরিস্থিতি দেখে তখন সে সব কথা খুলে বলে। কিন্ত তবুও নিশাত নাছোড় বান্ধা, সে বলে, “আমি এই সব ভয় পাই না, ভীতু কোথাকার আজ  যদি আমাকে না নিস তাহলে তোর সাথে বন্ধুত্ত বাতিল”। অবশেষে সে বলে  সে অর্ধেক পথ পর্যন্ত যাবে তবুও আজ সে নওশীনকে পৌঁছে দেবে। এভাবে শেষ পর্যন্ত দুজন একসাথে চলতে থাকে। নওশীন লক্ষ করল যে নিশাত আজ অন্যরকম কথাবার্তা বলছে এবং চলার পথে মাঝে মাঝে তাকে গান শোনাচ্ছে। নওশীন নিশাতের এই রূপ আগে কখনো দেখেনি। সে পুরপুরি মুগ্ধ কিন্তু কে জানতনা আজ তাদের দুজনের শেষ দেখা। অবশেষে অর্ধেক পথ যাওয়ার পর নওশীন থমকে দাড়াল এবং নিশাতকে বলল, “এবার তোমার যাওয়া শেষ কর এবং তুমি তোমার বাড়ীর দিকে রওনা হও”। কিন্তু নিশাত নারাজ, সে বলে, “এতদুর এসেছি আর বাকিটা গেলেই হত তোমাদের বাড়ী যেতাম, আর কোন খাবার চাচ্ছিনা শুধু এক ঘটি জল দিয়ে সারাদিনের তৃপ্তি মেটাবো ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি কতই নিষ্টুর আমাকে যেতে দিচ্ছনা। সকাল থেকে মুখে কিছুই দিনাই, আহা কি ভাগ্য আমার”। একথা শুনে নওশীনের মন গলে গেল, সে নিশাতকে আর বাধা দিলনা এবং দুজনে আবার পথ চলতে শুরু করল। যেতে যেতে কিছু দূর অতিক্রম করার পর দেখা হল বখাটেদের একজনের সাথে। সে তখন তাদের দিকে মেঘাচ্ছন্ন মুখে তাকিয়ে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করল এবং কেও একজনকে ফোন করে কি কথা বলল তার সাথে। এরপর হঠাৎ করে ইভটিজার ইভটিজার বলে চিৎকার করতে করতে বখাটে ছেলেগুলো ঝাপিয়ে পরে নিশাতের উপরে এবং নওশীনকে ওরা এক ধাক্কায় ফেলে দেয় মাঠে। নিশাতকে তারা লাঠি, লোহার দন্ড, বিভিন্ন রকম গাছের ডাল দিয়ে পেটাতে থাকে। নওশীন তাদের হাত থেকে নিশাতকে রক্ষা করতে না পেরে দৌড়াতে দৌড়াতে তার বাবার কাছে যায়। তার বাবা ঘটনাস্থলে আসতে আসতে বখাটেরা নিশাতকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে তার দেহটা মুমূর্ষ অবস্থায় রাস্তার মাঝখানে ফেলে পালিয়ে যায়। তার জ্ঞান ছিলনা, তাকে অজ্ঞান অবস্থায় নওশীনদের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঠিক তখন সে নওশীন নওশীন বলে ডাকতে থাকে। নওশীনকে কাছে পেয়ে সে তার সজল দুনয়নে তার দিকে তাকিয়ে বলে, “বড় ইচ্ছা ছিল তোমার বাড়ী দেখার কিন্তু সেটা আর হোলনা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি নওশীন কিন্তু এই কথা আমি কোনদিন তোমাকে বলিনি এবং বুঝতেও দিনি। তুমিও যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমাকে একটি বারের জন্য বুকে জড়িয়ে নাও এবং বল তুমিও আমায় ভালোবাসো”। এরপর নওশীন আর দেরি নাকরে নিশাতকে বুকে জড়িয়ে নিল এবং বলতে শুরু করল, “নিশাত আমিও তোমাকে খুব.........” এটুকু বলতে না বলতে নিশাত শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল তারপর ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পরল নওশীন। এরপর নিশাতকে তাদের বাড়ীর সামনে দাফন করা হোল এবং একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপন করা হল সেখানে। নওশীন সারাদিন সারারাত সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকত। কিছুদিন পর নওশীনের বাবা তাকে বলল “মা” তুই আর স্কুলে যাসনা, এবার আমি তোর জন্য একটা ভাল পাত্র দেখব। তানাহলে নিশাতের মত তোকেও হারাতে হবে আমার।

Thursday, March 23, 2017

কান্নাটা আমিও থামাতে পারি নি

কান্নাটা আমিও থামাতে পারি নি

ম্যাজিশিয়ান সাহিত্যের ছিন্ন পাতা.....
"কান্নাটা আমিও থামাতে পারি নি,,,,,"
কাজী মোহাম্মদ শিহাবুদ্দীন.
'''''''''''''''''সেদিন দুপুরবেলা হাত মুখ ধুয়ে
খেতে যাব, হঠাৎ
কে যেন মৌবাইল রিংটা বাজিয়ে
দিল।
মানে মাথাটা খারাপ হয়ে
যাওয়ারি কথা।
কারণটা হল সে যে হউক না কেন,
খাওয়ার সময়
বিরক্ত করা এটা কারো ভাল না
লাগারি কথা!
যাজ্ঞে দেখি খোকা। প্রথম বার হয়ত
রিসিভ করি নি,
তবে শেষ বার রিসিভ করা মাত্র ওর
কথা শুরু
করার আগে বলে উঠি....
:ওরে খোকা! আর
সময়
পেলি না কল করার,মাত্র খেতে
বসেছি।
অপর দিক
দিক থেকে বলে উঠে...
:মা ওমা এখন একটু
মা বলে ডাকতে দাও না প্লিজ? তার
পর
হতে আর কখনো মা বলে হয়ত ডাকতে
পারব না।
:কেন কি হয়েছে?
: মা আগুন তো প্রায়
আমার
কাছে চলে এসেছে, আর হয়ত পাঁচটা
মিনিট আছি এই
পর্যন্ত মা একটু কথা বলতে দে এর পরে
তোর
বেশি কথা বলা ছেলেটা একদম
নিঃশব্দ হয়ে যাবে।
কি বলছিস বাবা এইসব তোর কি
হয়েছে?
মা,মাগো আমরা শেষ মা,নিচ তলায়
বিদুৎ
শর্টে পুরো বিল্ডিং এ আগুন লেগে
গেছে মা। নিচের
সবাই হয়ত চায় নইতো বা কয়লা হয়ে
গেছে আর
কয়েকটা মিনিট কয়েকটা সেকেন্ড
পরে মা তোর
খোকাকে পাবি তাদের মাঝে। ওমা
বাবাকে বল
না আমাকে নিতে আসতে,ওমা তুই আয়
না হাজার লোকের মাঝে তোকে এক
পলক যদি দেখি।
তবে আমার মন শান্তি পাবে।
আচ্ছা মা তোরা কি কয়লা থেকে
আমার
লাশটা শনাক্ত করতে পারবি,দেখ
মা আমি আমার গলায় যে তাবিজটা
ছিল
তা মুখের ভেতরে রাখব, তাই যদি
চিনতে পারিস
আমাকে আমাদের আম বাগানে করব
দিস
যেখানে বসে শুধু আম
খেয়ে খেয়ে সারা বেলা কাটাতাম
সেই ছোট কাল
থেকে।আচ্ছা মা সেই খানে গিয়ে
আমারে আগের
মত পিটিয়ে পিটিয়ে ভাত খেতে
আনবি তো? মা আর
কোন দিন তোর কথা না শুনে কোথাও
যাব না,
আচ্ছা মা তুই আজ আমাকে আসতে
মানা করিস
নাই কেন? প্রতি বার তো তোর কথা
না শুনে ছোট
ছোট বিপদে পড়ি তবে আজ কেন তোর
মানা অমান্য
করা ছাড়া বিপদে পড়লাম। ওমা দেখ
না আমাদের রুমের দরজা পর্যন্ত
এসে গেছে মা হয়ত আর কয়েকটা
সেকেন্ড
পরে আমার গায়ে আগুন লাগবে আর
আমি জলে পুরে মরব।মা দেখ তোর
ছেলে কতটা সাহসী হয়ে গেছে
দেখনা?
আগে যে ছেলে একটা মাইর খাওয়ার
ভয়ে পালাত সে আজ মৃত্যুকে সামনে
রেখে মরার
প্রস্তুতি নিচ্ছে।মা ওমা, বাবার
অফিসে খবরটা হয়ত এতক্ষনে চলে
গেছে আর
এতক্ষনে বাবাও নিশ্চয় চলে এসেছে।
আচ্ছা মা এক কাজ করনা তুই ও চলে আয়
না?
যদি শত মানুষের মাঝে তোকে এক পলক
দেখে নিতে পারি তবে আমার মরে
শান্তি লাগবে!
মাগো কি আসবি? মা ওমা! কি রেগে
গেলি নাকি?
কথা বলছিস না কেন ওমা একটু কথা বল
না,।
[অশ্রুঝরা ঝরতে থাকে আর মাকে করুণ
সুরে মাকে ডাকতে থাকে খোকা আর
সে কি জানত
তার মা বাকশক্তি হারিয়েছে তাই
তাকে উত্তর
দেওয়ার চেষ্টা করেও উত্তর দিতে
পারছেনা।]
কয়েকটা সেকেন্ড পরে খোকা
চিৎকার
করে বলে ওঠে মা আগুন আগুন
পোড়ে যাচ্ছি বলে মোবাইলটা পড়ে
যার আর সংযোগ
দেওয়া সম্ভব হয়নি।আর তখনি তার মাও
জ্ঞান
হারায়।আসলে আমারএই কল্পনার
কাহিনীটা আংশিক রুপক হলেও
পুরোটা বাস্তব
খন্ড চিত্র, এটি মূলত আশুলিয়ার
তাজনিন
ফ্যাশনের এক শ্রমিকের ঘটনা অবলম্বনে
লেখা।এই
ঘটনা সহ রানা প্লাজা ধসের মাঝে ও
বহদ্দারহাটের ফ্লাইওভারের একটা ব্রিগেড
ভেঙ্গে অনেক সাধারণ
মানুষ ও শ্রমিকের মৃত্যুতে যারা প্রান
হারিয়েছে তাদের
জন্যে সারা দেশবাসী গভীর ভাবে
শুকাহত।
হে বন্ধুরা আমি লাইক চাই না কমেন্ট চাই
না ইচ্ছা হলে দিও তবে একটু নিজ নিজ
টাইমলাইনে শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইল।
-----------"ম্যাজিশিয়ান কাজী "

আমিও ভালবাসি তোমাকে

আমিও ভালবাসি তোমাকে_____
কাজী মোহাম্মদ শিহাবুদ্দীন।
>>>>>>>সাথিকে খুব ভালবাসত নিরব।তাই তার আশে পাশে সব সময় ঘুরে বেড়াতো তবে তার সাথে কথা বলার সাহস তার নেই।সাথিও বুঝতে পারতো নিরবের সব ভালবাসার ব্যাখ্যা । কেননা তাদের মাঝে প্রায় সময় চোখাচোখি হত,মাঝে মাঝে নিরব সাথিকে দেখে হা করে দেখে থাকত।এই সবের মাঝে আস্তে আস্তে সাথিও নিরবকে ভালবেসে ফেলেছে।তাই তার কর্ম কান্ড দেখে মাঝে মধ্যে মুচকি হাসি উপহার দিত।তাদের এই হাসা হাসিতে কোন প্রকার বেজাল ছিল না।তাই এক দিন নিরব মনের জোর নিয়ে সাথির কাছে একটা চিটি লিখল,"যাতে লেখা ছিল আমি তোমাকে মন প্রাণ ভরে ভালবাসি এতে কোন সন্দেহ নেই আর তুমি যদি আমাকে ভালবাস আজকের মধ্যে এর উত্তরটা দাও।শুধু মুখে একবার হ্যা বললে হবে।কিন্ত প্রায় ২ ঘন্টা দুইজন দুইজনের দিকে চেয়েছিল।আর নিরব অনেক বার ওকে হ্যা কিংবা না কিছু বলার জন্যে বলেছে তবে সাথি কিছু বলে নি শুধু মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে।তার পরে নিরব হতাস হয়ে মুচকি হাসিকে উপহাস সরুপ নিয়ে চলে গেল।পরে তাদের প্রায় ৭ টা দিন দেখা হল না। ঠিক সাত দিনের মাথায় সাথি খবর নিতে গেল নিরবের বাসায়, তবে সেখানে গিয়ে খবর পেল সাত দিন আগে.......
!
!
!
!
!
!
!
নিরব আত্মহত্যা করে মারা যাই। তখন কান্নার স্রোতধারা নিয়ে নিরবের কবরের পাশে গিয়ে একটা চিটি গুঁজে দেই যাতে লেখা ছিল,"সেদিন তুমি কি বলেছিলে তা আমি শুনি নি কারণ আমি কানে শুনি না আর তোমার চিটি পড়ে হ্যা কথাটি কোন কিছুতে বলতে পারি নি কারণ আমি বোবা ছিলাম। যাক ঘরে গিয়ে আমার সবচেয়ে পছন্দের ডায়েরীর পাতা ছিঁড়ে এই প্রথম তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই আমিও ভালবাসি তোমাকে।"
:::::®সমাপ্ত®:::::

পুরাতন ফলক

ম্যাজিশিয়ান সাহিত্যের ছিন্ন পাতা....
,,,,,,,পুরাতন ফলক,,,,,,,,
কাজী মোহাম্মদ শিহাবুদ্দীন
>>>মাঝে মাঝে এমন কিছু কথা মনে পড়ে যায় যা নিজেকে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতের দিকে। আমাদের কোচিং-এ সবার প্রিয় বান্ধবী রিবা (নামের প্রতিচ্ছায়া)। সে খুব দুরন্তপনা ও লেখাপড়ায় ও মেধাবী ছিল। যার কারণে সবাই তার সাথে মজা করত,আর সেও সবার সাথে খুব হাসিখুশিতে মেতে থাকত প্রতিটি মুহুর্ত ।সে দিন খোকন কুমার স্যারের কোচিং এর কথা......
স্যার কোচিং এর পাঠ দানে রসায়ন বিজ্ঞানের অম্লতার পাঠ নেওয়ার প্রসঙ্গক্রমে বলেন,প্রতিটি এসিডের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ আছে।আর এই ছাড়া আরো অনেক কিছু প্রসংঙ্গ এনেছে।কিন্তু স্যারের কথার এই ফাকে রিবা বলে উঠল,আচ্ছা স্যার নাকের সর্দিও কি এসিড কারণ ওটার যে একটা স্বাদ আছে।চমকে গেল সবাই...... তার কথা শুনে আমি হঠাৎ মাঝখান থেকে বলে উঠলাম,কিরে দোস্ত তুই কি সর্দিকপ খেয়ে দেখেছিস নাকি!!!!
সেও হাসি মুখে বলে উঠল, কেন!!! আমরা সবাই খায় না???[সে ছোট বেলার কথাটা বুঝাতে চেয়েছে, কিন্তু তার এই কথাটা বুঝিয়ে দেওয়ার আগে ]......সবাই অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠল, ছি ছি ছি আমরা এই সব খায় না!!!শুধু তুমি খাও যে।এই কথা শুনে সে খুব লজ্জা পেল,আর সবাই হো হো হো করে হাসতে লাগল।সবাইকে মজা দিতে গিয়ে রিবা নিজে লজ্জা পেলেও সবাই ঠিকই মজা পেয়েছ। তবে তার এই কথাটা মনে পড়েলে আজও আমার হাসি পায়।আর হাসতে হাসতে স্মৃতির পাতা হয়ত বন্ধ করে রাখি আর খুব মিস করি ফেলে আসা পুরাণ দিন গুলোকে।Miss U নলেজ সেন্টার ;